নিউজ ডেস্ক:
টানা কয়েক দিন হামলা-পাল্টা হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তান নাটকীয়ভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় বিশেষ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তান ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন ভারতের ডিরেক্টর জেনারেলকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। ভারত সেটা মেনে নিয়েছে। এরপর উভয় পক্ষই দুই দেশের সামরিক বাহিনীকে জল, স্থল ও আকাশপথে সব ধরনের হামলা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বিকাল ৫টা থেকে। এরপর উভয় জেনারেল আগামী ১২ মে দুপুর ১২টায় আবার কথা বলবেন।
এমন একসময় এ ঘোষণা এলো যেদিন সকাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছিল। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করছিল।
সীমান্তেও চলছিল তীব্র উত্তেজনা। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের এ ঘোষণার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে উল্লেখ করেন, এ যুদ্ধবিরতির জন্য তিনি সারা রাত আলোচনার পর সফল হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাত ধরে আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়ার জন্য উভয় দেশকে আমি অভিনন্দন জানাই। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ!’
আগের খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার দিনগত রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান উভয়ই পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। উভয় পক্ষই একে-অপরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনের দাবি করে। পাশাপাশি দুই পক্ষই তা নাকচ করে দেয়। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক চাপের কথা উল্লেখ করে দুই দেশের মধ্যে সংলাপ প্রত্যাশা করে বিবৃতিও দেন।
সর্বশেষ যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ পাকিস্তান ও ভারতীয় সামরিক সূত্রগুলো গতকাল জানায়, ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তজুড়ে দুই দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে থাকায় যে কোনো মুহূর্তে স্থলযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে ‘হেভি শেলিং’ করা হয়। এ ছাড়া গতকাল ভোরে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো দফায় দফায় রফিকি, মুরিদ, চাকলালা, রহিম ইয়ার খান, সুক্কুর এবং চুনিয়ানে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। ভারত দাবি করে, এ আক্রমণে ঘাঁটিগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘাঁটিগুলো অচল করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান এ দাবি নাকচ করে দেয়।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, একইভাবে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলো থেকে ভোররাতে ভারতের পাঁচটি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘাঁটিগুলোর মধ্যে রয়েছে আদমপুর, উধমপুর, পাঠানকোট, সুরতগড় এবং সিরসা। একই সঙ্গে ভারতের ২৬টি স্থানে ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা চালানো হয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ভারতের বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে। এ হামলাকে ‘কাপুরোষিত’ বর্ণনা করে তিনি বলেন, এর জবাব দিতে সামরিক বাহিনী ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।
তার দাবি অনুযায়ী, আক্রান্ত ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি হলো রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটি, যা দেশটির সামরিক সদর দপ্তর। এ ঘাঁটি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ জানায়, ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা (আইএসপিআর) জানায়, পাল্টা এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বনিয়ান মারসুস’।
রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, পাকিস্তান বিমানবাহিনী জেএফ-১৭ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের আদমপুরে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানে। এতে ওই সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যায়। এ ছাড়াও বিয়াস অঞ্চলে ভারতের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের ফেডারেল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চলমান রয়েছে। এ হামলায় ভারতের উধমপুরের একটি এবং পাঠানকোটের দুটি বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৬টায় দুটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বাসিন্দারা। এর মিনিট বিশেক পর আরও তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। শহরে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শ্রীনগর বিমানবন্দর এলাকার এক বাসিন্দা বলেছেন, তিনি জেট বিমানের মতো একটা শব্দ শুনেছিলেন, যার পরই বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন। প্রথম বিস্ফোরণের সময় বলতে না পারলেও তিনি জানিয়েছেন, জেট বিমান যাওয়ার মাত্র ১৩ সেকেন্ড পরই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে। বিমানবন্দরের পাশে থাকা আরেক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০টা মিনিটে বলেছেন, ‘প্রথমে জেট বিমানের শব্দ শোনা যায়, তারপরই বিস্ফোরণ ঘটে। ’ এরপর ধোঁয়া উড়তে দেখেছেন স্থানীয়রা। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।